বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ ছড়িয়ে পরেছে, তাদের পতন অনিবার্য। আজ পর্যন্ত কোন ফ্যাসিবাদ টিকে থাকতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিনতি বা ফলাফল ভাল হয় না। বিএনপি ইতমিধ্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বিএনপির ৫শ নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করে প্রমান করেছি এবং দেখেছি সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে কিভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। সেখান থেকে বের হতে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তিনি গতকাল মঙ্গলবার কালিবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, যিনি ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি সত্যটা বের করে জনগনের সামনে এনেছিলেন। বিশেষ করে করোনা সংক্রান্ত সরকারের যে দুর্নীতি, অধিদপ্তরের যে দুর্নীতি এগুলোকে তিনি জনসম্মুখে নিয়ে এসেছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কার্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি ন্যাক্কারজনক। এটার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ৫ ঘন্টা আটক করে তাকে পুলিশে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর জন্য সরকারকে ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সসম্মানে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি একইসাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ দাবি করছি। এই দেশে আমরা অনেকদিন আগে থেকে বলে আসছি, মানুষের কোন অধিকার নেই। না আছে সাধারণ অধিকার, না আছে রাজনৈতিক অধিকার, না আছে সাংবাদিকদের কোন অধিকার। সেটাকে তারা গণতন্ত্র বলে। গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ভিন্ন মত পোষন করাবার স্বাধীনতা। এটাই স্বাধীনতা।
তিনি আরও বলেন, সেই ডেমোক্রেসির প্রধান স্তম্ভটাই আজকে নষ্ট হয়েছে। সংবাদপত্র ও মিডিয়ার কর্মীদেরকে আজকে যদি এভাবে হেনেস্তা করা হয় তাহলে কেমনে হয়। আজকে রোজিনা ইসলামের এমন অবস্থা, সাংবাদিকদের সত্য বলার কারনে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। মাহমুদুর রহমান দীর্ঘকাল কারাগার বরণ করেছেন। কমপক্ষে ৫০ জন সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। সাংবাদিকদের একটা না একটা অপরাধ দিয়ে আটকিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যকান্ডের কত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের হত্যাকান্ডের কোন সুরাহা হয়নি। ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বলেছিলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যকারীদের গ্রেফতার করা হবে। আমরা এর কারন হিসেবে জানি বড় বড় মানুষজন এর সাথে জড়িত ছিলেন। সাংবাদিক কাজলসহ অসংখ্য সাংবাদিক হামলা মামলার স্বীকার। আজকে সরকারের বিরুদ্ধে বা এমপি, মন্ত্রিদের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ করলে সাংবাদিককে ধরে এনে হাত পা ভেঙ্গে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি সবচেয়ে বড় অস্ত্র ব্যবহার করছে তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে। এই আইন দিয়ে আজকে সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করে ধরেছে সরকার। এ জাতীয় ঘটনার পেছনে কারণ হচ্ছে আর কেউ যাতে করে কোন প্রকার দুর্নীতির রিপোর্ট না করার সাহস পায়। এটা হচ্ছে একটা সমাজকে, গণতন্ত্রকে হত্যা করার নীল নকশা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মূল আত্মাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা। আজকে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, উকিল, ডাক্তারদের মধ্যে বিভক্তি করা হয়েছে। তার ফলস্বরুপ হিসেবে আজকে কেউ বিরুদ্ধে বলছে না। এ জাতীয় নীপিড়নের জন্য রাষ্ট্রের উপর মানুষের আস্থা উঠে যাবে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পুর্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে কারাভোগ করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা দেশের বাহিরে যেতে বললেও সরকার যেতে দিচ্ছে না। এর কারণ হলো সরকার মনে করে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের পক্ষে একজন সৈনিক তাকে বাহিরে যেতে দিলে সমস্যা। একনায়েকতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন। ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে সরকার ভোটের আগের রাতেই ভোট মেরে চুরি করে ক্ষমতায় টিকে আছে। সে কারনেই আজ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মতিউর রহমান, রোজিনা ইসলাম, মাহমুদুর রহমানসহ অনেকের বিরুদ্ধে এ জাতীয মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সংবাদকর্মী, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য রুখে দাড়ান, সবাই একসাথে হউন। কিন্তু হচ্ছে না, এখন ভাবছেন কেউ কিছু করতে গেলে বা লিখতে গেলে চাকুরী হারানোর ভয় থাকে। সবাই সব সময় এই ভয়েই থাকেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।